ইসলামের অন্যতম সৌন্দর্য হচ্ছে সহনশীলতা, বিশেষ করে ভিন্ন ধর্মের প্রতি সহনশিল আচরণ। সফলতার অন্যতম অণুঘটক হচ্ছে সহনশীলতা। ইসলামের ইতিহাসের পরতে পরতে জমে আছে এই সহনশীলতার অনুপম উদাহরণ। আর আজ আমরা পরমতসহিষ্ণুতা থেকে অনেক দূরে চইলে গেছি। আমাদের পতনের অন্যতম কারণও এই সহনশীলতা।
"সফলতার প্রথম শর্ত হচ্ছে সহনশীলতা।";
- Nazar E Zilani
ইসলামের অন্যতম সৌন্দর্য হচ্ছে সহনশীলতা, বিশেষ করে ভিন্ন ধর্মের প্রতি সহনশিল আচরণ।
"সফলতার প্রথম শর্ত হচ্ছে সহনশীলতা।";
৫০০০ দ্বীপ নিয়ে গঠিত ইন্দোনেশিয়া পৃথিবীর মধ্যে বৃহত্তম মুসলিম জনবহুল দেশ।
২য় শতাব্দীতে হিন্দু ও বৌদ্ধ সভ্যতা ও সম্রাজ্য গড়ে ওঠে। তবে ১৩শ শতাব্দীতে ইসলামের আগমনে দেশটি ধীরে ধীরে সংখ্যা গরিষ্ঠ মুসলিম দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে যাযিরাতুল আরব থেকে এত দুর দেশ হয়েও ইন্দোনেশিয়া ইসলামের "পরমত সহনশীলতা" 'র অপূর্ব দৃষ্টান্ত হয়ে আছে।
সংযুক্ত ছবিতে দেখা যাচ্ছে মহাভারতের চরিত্র সমুহ সুন্দর ভাস্কর্যের মাধ্যমে চমৎকারভাবে ফুটায়ে তোলা হয়েছে।
মনে পড়ে ইসলামের বিধানঃ
তোমরা ভিন্ন ধর্মের লোকদেরকে ও তাদের দেবদেবীকে গালাগালি করো না কারণ তারাও তোমার আল্লাহকে গালি দিতে পারে।
বায়তুল মকাদ্দাস বিজিত হলে বিজিতরা আমিরুল মুমিনের সাথে সন্ধি করতে চায়, ক্ষমতা হস্তান্তর করতে চায়।
খলিফা হযরত ওমর (রাঃ) ফিলিস্তিনে এসে অমুসলিমদের সাথে যে আচরণ করেন, তাদের ধর্মীয় স্পর্শকাতর স্থানের প্রতি যে সন্মান দেখান আমরা তা ভুলে বসেছি।
বাইতুল মুকাদ্দাসে খ্রিষ্টান ধর্মগুরুর অনুরোধের জায়গায় হযরত ওমর (রাঃ) নামাজ পড়লেন না। বললেনঃ
"আমি এখানে নামাজ পড়লে আমার সৈন্যরা এ জায়গাকে মসজিদে পরিবর্তিত করে ফেলতে পারে।"
উভয়ে ভিন্ন জায়গায় যার যার ধর্মীয় রীতিতে নামাজ আদায় করলেন!!!
ইহুদীদের উপাসনার জায়গা পরিত্যাক্ত ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হওয়ায় হযরত ওমর (রাঃ) নিজেই শুরু করলেন সেই পবিত্র জায়গা পরিস্কার করতে।
ভিন্ন ধর্মের প্রার্থনার জায়গার প্রতি ইসলামের কি মহান দৃষ্টিভঙ্গি!!
পবিত্র কোরআনের সুরা মায়েদা'র ৪৮ নম্বর আয়াতে আল্লাহ্ বলেনঃ
"আর যদি আল্লাহ্ চাইতেন, তবে অবশ্যই তিনি তোমাদের সবাইকে এক জাতি করে দিতেন। কিন্তু তিনি তোমাদের পরীক্ষা করতে চান যা তিনি তোমাদের দিয়েছেন তার মাধ্যমে। অতএব নেক কাজের প্রতি ধাবিত হও। তোমাদের সবাইকে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। তারপর তিনি তোমাদের অবহিত করবেন সে বিষয়ে যাতে তোমরা মতভেদ করতে।” (সূরা মায়িদাহ ৫ঃ৪৮)
আল্লাহ্ রব্বুল আলামিন আখেরি নবী (সাঃ) 'কে দাওয়াত পৌঁছানোর বাইরে আর কিছুই করতে বলেন নাই। শাসকের মত আচরণ করতে নিষেধ করেছেন। "ওমা আলাইনা ইল্লাল বালাগ" বলেই থামতে বলেছেন নবী (সাঃ) 'কে।
আর আজ আমরা ভিন্ন ধর্মের অনুসারীদেরকে উপহাস, অপমান, ছোট করা সহ কি না করে দিন শুরু করি??
হিংসা ঘৃণা দিয়ে ইসলাম বিকশিত হয় নাই।
খায়বর সহ সর্বত্র দাওয়াতের সুযোগ না দিয়ে নবীজী (সঃ) আত্মরক্ষামুলক যুদ্ধ করেন নাই। তায়েফ, হুনাইন সহ অসংখ্য উদাহরণ আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয় ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের সাথে কেমন আচরণ করতে হবে।
দুর্ভাগ্য যে বর্তমানে আমরা অতীত ভুলে, ইসলামের শিক্ষা ভুলে হিংসুক, অসহনশীল হয়ে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের সাথে বিরূপ আচরণ করাকে জায়েজ মনে করে পিছনেই হাঁটছি।
শুধুই কি ভিন্ন ধর্মাবলম্বী??
মাজহাব, মানহাজ বা আকিদা আমল নিয়ে নিজেদের মধ্যে যে শব্দে, যে ভাষায় আক্রমণ, প্রতি-আক্রমণ হররোজ দেখি ও শুনি ডিজিটাল প্লাটফর্মে তাতে অধিকাংশ "ওরেসাতুল আম্বিয়া" 'র প্রতি শ্রদ্ধাবোধ কর্পূরের মত উধাও হয়ে যায়, যাচ্ছে, হয়তো যাবেও আরও দ্রুত গতিতে।
এভাবে আর যাই হোক মানুষের মন জয় করা যায় না।